মাহমুদুল খান আপেল
বিগত ১৫ বছরের শেখ হাসিনার নজিবিহীন কতৃত্ববাদী শাসনে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে সে নিজে যেরকম নোংরা রাজনীতি করে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার তার গেমগুলিও সেরকম ডার্টি হয়! সে নিজে কাদায় নেমে অন্যদের সেখানে ডাকে গায়ে কাদা লাগায়ে নিজেকে তারমত ডার্টি বানায়ে তার সাথে তারমত করে লড়তে কিন্তু ভদ্র সমাজের কারো পক্ষে তার এই ডার্টি গেমে অংশ নেয়া সম্ভবনা! কে যাবে গায়ে কাদা লাগিয়ে কাঁদার মধ্যে কুস্তি খেলতে! এই জন্যেই সে যা খুশি তাই করে যেতে পারে! আর সবকিছু উজার করে দিতে যার কোন সমস্যা নাই তার আর হারানোর ভয় কি!
ভদ্র সমাজ তাদেরমত করে সমাজের স্ট্যান্ডার্ড মেনে কাজ করে, সেজন্য গায়ে কাদা লাগালো নোংরা খেলোয়ারদের সাথে খেলাটা হয় অসম! তাই বলে খেলা বন্ধ থাকেনা!
সার কথ হলো, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রানভোমরা পশ্চিমে বাধা! এদেশের অর্থনীতিকে কলাপ্স করতে তাদের লিখিত কোন স্যাংশন বা বানিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা কোন কিছুরই দরকার হবার কথানা! সভ্য দুনিয়ায় বাংলাদেশের মতো ভুতুরে শাসন চলেনা! ঐসব দেশে সরকার এবং ব্যাবসয়ীরা একে অপরের সংগে সমন্বয় করে কাজ করে! ব্যাবসায়ীরা এমন কিছু করেনা যা সরকারের নীতির বিপক্ষে যায়, আবার সরকারও এমন কিছু পারতপক্ষে করেনা যা ব্যাবসায়ী বা অন্যসব স্টেকহোল্ডারদেকে সমস্যায় ফেলে! সেসব করা হয় বোঝাপড়ার মাধ্যমে! বাংলাদেশের মত গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে জোর করে ধরে এনে সরকারের পক্ষে কাজ করানোর মত করেনা! তো পশ্চিমের ব্যাবসায়ীরা তাদের নিজ নিজ সরকারের পলিসি ঠিকই বোঝে! সেজন্য কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকার পরও তারা বাংলাদেশের সাথে তাদের বিজনেস ডিলে নতুন ক্লজ যুক্ত করছে, এটা এক ধরনের সতর্কতা! পরবর্তীতে তারা আরও কঠোর হবে, এটা সেই আলামত! মোদ্দা কথা ব্যাবসায়ীরা তাদের অর্ডার কমায়ে দিলেই বাংলাদেশের গার্মেন্টন্স সেক্টর চ্যাঙ্গে উঠে যাবে! এতো সহজে যদি কাজ হয় তাহলে ঢাক ঢোল পিটায়ে স্যাংশন দেয়ার দরকার কি! আবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছে! আর শেখ হাসিনা যে বলে এতো সস্তায় তারা কোথায় মাল পায়, সেটাও আমি দেখবো! এর চেয়ে ভূয়া কথা আর একটাও হতে পারেনা! সেটা দুদিন পরই প্রমান হবে!
মোটের উপর কথা অর্থনীতির যেদুইটা প্রানভোমরার কথা বললাম, সে দুইটাই মারাত্ম হুমকির মুখে! শেখ হাসিনার কথামত মার্চে না হলেও আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে এদেশের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়বে! সে প্রক্রিয়া শুরু হবে জানুয়ারী মাস থেকেই!
ঋণ নিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ফুলেফেপে অনেক বড় করা হইছে, সেই সব ঋণের কিস্তি শুরু হলে রপ্তানী আয় আর রেমিটেন্সের যে গ্রোথ বা বৃদ্ধি দরকার ছিলো তা তো হয় ই নি বরং উল্টো রকেটের গতিতে কমতে শুরু করেছে! এটা খুব সহজ হিসেব! আপনি ঋণ নিয়ে একটা মুরগির ফার্ম দিলেন এই আসায় যে বাচ্চা মুরগি কিনে তা বড় করে বিক্রি করে সেই টাকাই ঋণ শোধ করে কিছু লাভের মুখ দেখবেন! এটা আপনার প্লান কিন্তু পরবর্তীতে আপনি প্লানমত ঋণের টাকায় মরগির খাবার না কিনে সেইটাকা নিজের মনে করে মৌজ মাস্তি করলেন এবং পরবর্তীকালে সেসব মুরগি বড় না হতেই নিজেই জবাই করে খাওয়া শুরু করবেন নিজের খাবারের চাহিদা পূরনে, ফলাফল কি হবে সেটা কল্পনা করতে কাউকে বিদ্যাসাগর হইতে হবেনা! ঠিক একই ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে! চড় সুদে ঋণ নিয়ে সেসব টাকায় অবকাঠানো নির্মান করা হয়েছে কিন্তু ঋণ পরিশোধের জন্য বাড়তি আয় করা কোন প্রজেক্ট করা হয়নি! তাই ঘুরেফিরে দেশের অর্থনীতিকে নির্ভর করতে হয়েছে সেই গার্মেন্টস আর রেমিটেন্সের উপর! কাজেই এই দুইটা খাতে নূন্যতম আঘাত সহ্য করারমত অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতি নেই! সেই অবস্থায় এই দুইটা সেক্টের উপর যদি ম্যাসিভ এ্যাটাক হয়, এদেশেটা কলাপ্স করতে আর কোন স্যংশন বা ভিসানীতির কি আদৌ কোন দরকার আছে!
তবে খুব দূঃখভারাক্রান্ত মনে বলতে হচ্ছে যে এই দুইটা সেক্টর ছাড়া উল্লেখ করবার মত নতুন কোন আয়ের সেক্টর তৈরী হয়নি দেশে বরং এই দুইটা সেক্টরও আজ ধ্বংস হতে চলেছে! আর এই ধ্বংসের পরিনতি যে কতটা ভয়াবহ সেটা হয় নিকট ভবিষ্যতে আপনার নিজ চোখে দেখতে হবে! এই পরিস্তিতিতে একমাত্র উপায় ছিলো জনগনের সম্মিলিত প্রতিবাদ, যা হয়ে ওঠেনি কারন বর্তমান অবৈধ সরকার পাশের দেশের সরাসরি সহযোগীতায় রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা নিজের কব্জায় নিয়ে নিয়েছে! সেক্ষেত্রে একটিমাত্র পন্থা অবশিষ্ট থাকে, তাহলো সিরিয়ার আদলে রাষ্ট্রশক্তির সাথে যুদ্ধে অবতীর্ন হওয়া! সেক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি বাকি অবকাঠানোও ধ্বংস হবার সম্ভবনা তৈরী হয়! দেশের জনগন বা রাষ্ট্র ক্ষমতার অন্যসব স্টেটহোল্টাররা তা চাননি! আর সেকারেই এই দেশটা আরও সিরিয়া হয়ে যায়নি!
এমন জটিল সমিকরনে অর্থনীতিকে চাপে ফেলে এই দূঃশাসন থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা ছাড়া আর কি করার থাকে!